ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা শুরু করে- যা বেসামরিক ব্যবহারের মাত্রার চেয়ে বেশি, তবে অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের নিচে।.........মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার বলেছেন, তিনি ইরানকে কোনো কিছু দিচ্ছেন না এবং তাদের সাথে কথাও বলছেন না এবং যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে দেশটির পরমাণু স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করে দিয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘আমি ওবামার মতো ইরানকে কিছুই দিচ্ছি না। আমি তাদের সাথে কোনো কথাও বলছি না। আর আমরা ওদের পরমাণু স্থাপনাগুলো একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছি।’
এই মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়, যখন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ভবিষ্যতে ইরানে আর কোনো হামলা না চালানোর প্রতিশ্রুতি না দেয়, তবে দুই দেশের মধ্যকার আলোচনা পুনরায় শুরু হতে পারে না।
মাজিদ তাখত-রাভানচি ব্রিটিশ সম্প্রচার মাধ্যমটিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইঙ্গিত দিয়েছে তারা আবারো আলোচনায় ফিরতে চায়- যা এমন এক সময় জানানো হয়েছে, যখন মার্কিন বাহিনী এক সপ্তাহ আগে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।
‘আমরা এখনো কোনো তারিখে সম্মত হইনি, এমনকি আলোচনার কাঠামোও ঠিক হয়নি,’ বলেন রাভানচি। ‘আমরা এখনো একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি- আমরা যখন সংলাপে বসব, তখন কী আবারো আগ্রাসনের পুনরাবৃত্তি দেখব না?’
তিনি বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রকে খুব স্পষ্ট হতে হবে।’
উল্লেখ্য, দুই দেশ যখন তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় ছিল, ঠিক তখনই চলতি মাসে ইসরাইল ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। যুক্তরাষ্ট্র ২১ জুন ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান- এই তিনটি স্থানে বোমাবর্ষণ করে হামলায় যোগ দেয়।
উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাভানচি বিবিসিকে আরো জানান, যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে, তারা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লক্ষ্য করে কোনো ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর পথে হাঁটতে চায় না।
তিনি বলেন, ইরান এখনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার রাখে।
রাভানচি বলেন, ‘এই মাত্রা কত হবে, কতটা সক্ষমতা থাকবে, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু যদি কেউ বলে, তোমাদের কোনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির অধিকার নেই, একেবারে শূন্য- আর যদি রাজি না হও, তাহলে বোমা মেরে দেব; এটা তো জঙ্গলের আইন।’
ইসরাইলের দাবি, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বোমা তৈরির খুব কাছাকাছি। তবে তেহরান বলছে, তাদের প্রকল্প সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ, বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো বেসামরিক প্রয়োজনে ব্যবহারের উদ্দেশে।
তবে ট্রাম্প দাবি করলেও ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
জাতিসঙ্ঘ পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ইরান সম্ভবত ‘কয়েক মাসের মধ্যেই’ পুনরায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা শুরু করতে পারবে।
রাভানচি বলেন, তিনি জানেন না এটি ঠিক কত সময় লাগবে।
২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী, ইরান ৩.৬৭ শতাংশের নিচে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারত, যা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জ্বালানি উৎপাদনে ব্যবহার হতো।
কিন্তু ট্রাম্প ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেন। এর পর ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা শুরু করে- যা বেসামরিক ব্যবহারের মাত্রার চেয়ে বেশি, তবে অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের নিচে।
এই ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আরো শোধন করলে নয়টির বেশি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট হতে পারে।
সূত্র : এএফপি
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ